ই'তিকাফের ফজিলত ও গুরুত্ব
حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ حَدَّثَنِي ابْنُ وَهْبٍ، عَنْيُونُسَ، أَنَّ نَافِعًا، أَخْبَرَهُ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَعْتَكِفُ الْعَشْرَ الأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ
কারণ আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ “আর যতক্ষণ তোমরা ই’তিকাফ অবস্থায় মসজিদসমূহে অবস্থান কর ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা করো না। এগুলো আল্লাহর সীমারেখা। অতএব তোমরা এর নিকটবর্তী হয়ো না। এভাবে আল্লাহ তাঁর নিদর্শনাবলী মানব জাতির জন্যে সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন, যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করে।” (আল-বাকারাঃ ১৮৭)
রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ করা
আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমযানের মধ্যম দশকে ই‘তিকাফ করতেন। এক বছর এরূপ ই‘তিকাফ করেন, যখন একুশের রাত এল, যে রাতের সকালে তিনি তাঁর ই‘তিকাফ হতে বের হবেন, তখন তিনি বললেনঃ যারা আমার সঙ্গে ই‘তিকাফ করেছে তারা যেন শেষ দশকে ই‘তিকাফ করে। আমাকে স্বপ্নে এই রাত (লাইলাতুল ক্বদ্র) দেখানো হয়েছিল, পরে আমাকে তা (সঠিক তারিখ) ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। অবশ্য আমি স্বপ্নে দেখতে পেয়েছি যে, ঐ রাতের সকালে আমি কাদা-পানির মাঝে সিজদা করছি। তোমরা তা শেষ দশকে তালাশ কর এবং প্রত্যেক বেজোড় রাতে তালাশ কর। পরে এই রাতে আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষিত হয়, মসজিদের ছাদ ছিল খেজুরের পাতার ছাউনির। ফলে মসজিদে টপটপ করে বৃষ্টি পড়তে লাগল। একুশের রাতের সকালে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর কপালে কাদা-পানির চিহ্ন আমার এ দু’চোখ দেখতে পায়।
ইতিকাফকারী ব্যক্তি বাহিরে আসতে পারবে কি?
হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, মসজিদে ই‘তিকাফরত অবস্থায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার দিকে তাঁর মাথা ঝুঁকিয়ে দিতেন আর আমি ঋতুবতী অবস্থায় তাঁর চুল আঁচড়িয়ে দিতাম।তিনি বলেন, আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে থাকাবস্থায় আমার দিকে মাথা বাড়িয়ে দিতেন আর আমি তা আঁচড়িয়ে দিতাম এবং তিনি যখন ই‘তিকাফে থাকতেন তখন (প্রাকৃতিক) প্রয়োজন ব্যতীত ঘরে প্রবেশ করতেন না।
রাত্রিকালে ইতিকাফ
উমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - কে জিজ্ঞেস করেন যে, আমি জাহি্লিয়্যাহ যুগে মসজিদুল হারামে এক রাত ই‘তিকাফ করার মানত করেছিলাম। তিনি (উত্তরে) বললেনঃ তোমার মানত পুরা কর।
মহিলাদের ইতিকাফ
হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু বর্ণিত তিনি বলেন, রমযানের শেষ দশকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ই‘তিকাফ করতেন। আমি তাঁর তাঁবু তৈরি করে দিতাম। তিনি ফজরের সালাত আদায় করে তাতে প্রবেশ করতেন। নবী-সহধর্মিণী হাফসা (রাঃ) তাঁবু খাটাবার জন্য ‘আয়িশা (রাঃ)-এর কাছে অনুমতি চাইলেন। তিনি তাঁকে অনুমতি দিলে হাফসা (রাঃ) তাঁবু খাটালেন। (নবী-সহধর্মিণী) যায়নাব বিনতু জাহশ (রাঃ) তা দেখে আরেকটি তাঁবু তৈরি করলেন। সকালে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁবুগুলো দেখলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ এগুলো কী? তাঁকে জানালো হলে তিনি বললেনঃ তোমরা কি মনে কর এগুলো দিয়ে নেকী হাসিল হবে? এ মাসে তিনি ই‘তিকাফ ত্যাগ করলেন এবং পরে শাওয়াল মাসে দশ দিন (কাযা স্বরূপ) ই‘তিকাফ করলে ।
ইতিকাফ হতে বের হওয়ার সময় সকাল বেলা
আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা রমযানের মাঝের দশকে আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর সঙ্গে ই‘তিকাফ করেছিলাম। বিশ তারিখের সকালে (ই‘তিকাফ শেষ করে চলে আসার উদ্দেশ্যে) আমরা আমাদের আসবাবপত্র সরিয়ে ফেলি। আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকটে এসে বললেনঃ যে ব্যক্তি ই‘তিকাফ করেছে সে যেন তার ই‘তিকাফ স্থলে ফিরে যায়। কারণ আমি এই রাতে (লাইলাতুল ক্বাদর) দেখতে পেয়েছি এবং আমি আরো দেখেছি যে, আমি পানি ও কাদার মধ্যে সিজদা করছি। এরপর যখন তিনি তাঁর ই‘তিকাফের স্থানে ফিরে গেলেন ও আকাশে মেঘ দেখা দিল, তখন আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হল। সেই সত্তার কসম! যিনি তাঁকে যথাযথই প্রেরণ করেছেন, ঐ দিনের শেষভাগে আকাশে মেঘ দেখা দিল। মসজিদ ছিল খেজুর পাতার ছাউনির। আমি তাঁর নাকের অগ্রভাগে পানি ও কাদার চিহ্ন দেখেছিলাম।
ইতিকাফ করার ইচ্ছা করে কারণ বসত তা থেকে বেরিয়ে যাও
হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমযানের শেষ দশকে ই‘তিকাফ করার ইচ্ছে প্রকাশ করলে ‘আয়িশা (রাঃ) তাঁর কাছে ই‘তিকাফ করার অনুমতি চাইলে তিনি তাঁকে অনুমতি দিলেন। এরপর হাফসা (রাঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) এর নিকট অনুমতি চাইলে তিনি তাঁকে অনুমতি দিলেন। তা দেখে যায়নাব বিনতু জাহশ (রাঃ) নিজের জন্য তাঁবু লাগানোর নির্দেশ দিলে তা পালন করা হল। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের সালাত আদায় করে নিজের তাঁবুতে ফিরে এসে কয়েকটি তাঁবু দেখতে পেলেন। তখন তিনি বললেনঃ এ কী ব্যাপার? লোকেরা বলল, ‘আয়িশা, হাফসা , যায়নাব (রাঃ)- এর তাঁবু। আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তারা কি নেকী পেতে চায়? আমি আর ই‘তিকাফ করবো না। এরপর তিনি ফিরে আসলেন। পরে সাওম শেষ করে শাওয়াল মাসের দশ দিন ই‘তিকাফ করেন।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
এরকম আরো অসংখ্য হাদিস ও শিক্ষামূলক পোস্ট পেতে আমাদের এই বাংলা ব্লক ওয়েবসাইটটির সাথে থাকুন।
প্রয়োজনীয় সকল তথ্য পেতে ভিজিট করুন আমাদের এই ওয়েবসাইডে ও যোগাযোগ করুন টেলিগ্রাম,ফেসবুক, হোয়াটস্যাপ ও জেকে ব্লগ বিডি ডট কম ওয়েবসাইট।
আমাদের এই ওয়েব সাইডটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url