স্বপ্ন ও ব্যাখ্যা



      স্বপ্ন কত প্রকার ও কি কি 


আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামাত নিকটবর্তী সময়ে মু’মিনদের স্বপ্ন খুব কমই মিথ্যা হবে। তাদের মধ্যে বেশি সত্যবাদীর স্বপ্নও তদনুরূপ সত্য হবে। মু’মিনের স্বপ্ন হলো নাবূওয়াতের ছিচল্লিশ ভাগের একভাগ। আর স্বপ্ন তিন প্রকারঃ (১) ভাল স্বপ্ন হলো আল্লাহ্‌ তা’আলার নিকট হতে সুসংবাদস্বরূপ। (২) আরেক প্রকার স্বপ্ন হলো শাইতানের নিকট হতে মু’মিনের জন্য দুশ্চিন্তাস্বরূপ। (৩) আরেক প্রকার স্বপ্ন হলো মানুষের মনের চিন্তা-ভাবনা (সে যা চিন্তা করে তা-ই স্বপ্নে দেখে)। অতএব, তোমাদের কেউ যদি অপছন্দনীয় স্বপ্ন দেখে তাহলে সে যেন উঠে যায় এবং (বাম দিকে) থুথু ফেলে এবং তা লোকের নিকট না বলে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি স্বপ্নে (পায়ে) শৃঙ্খল দেখা পছন্দ করি; কিন্তু (গলদেশে) শৃঙ্খল দেখা অপছন্দ করি। (পায়ে) শিকলের তাৎপর্য হলো ধর্মের উপর স্থিতিশীল।

সহীহ্ঃ বুখারী ও মুসলিম।



     ভোররাতে স্বপ্ন সত্যি হয় 

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ভোর রাতের স্বপ্নই বেশী সত্য হয়। 

আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ “দুনিয়াবী জীবনে তাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ” প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেনঃ তা হলো সৎ স্বপ্ন, যা মু’মিন ব্যক্তি দেখে বা তাঁকে দেখানো হয়।

সহীহ, সহীহাহ্‌ (১৭৮৬)।

আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি স্বপ্নের মধ্যে আমাকে দেখতে পেয়েছে সে আমাকেই দেখতে পেয়েছে। কেননা, শাইতান আমার রূপ (সাদৃশ্য) ধারণ করতে পারে না।

সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩৯০০)।


কেউ খারাপ স্বপ্ন দেখলে তার করণীয় 


হযরত কাতাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ভাল স্বপ্ন আসে আল্লাহ্‌ তা‘আলার পক্ষ হতে এবং মন্দ স্বপ্ন আসে শাইতানের পক্ষ হতে। কাজেই কেউ যদি স্বপ্নে অপছন্দীয় কিছু দেখতে পায় তাহলে সে যেন তার বামদিকে তিনবার থুথু ফেলে এবং এর অকল্যাণ হতে আল্লাহ্‌ তা‘আলার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে। তাহলে তাতে তার কোন ক্ষতি হবে না।

সহীহ, বুখারী, মুসলিম।


           স্বপ্নের ব্যাখ্যা 


আবু রাজিন আল উকাইলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু’মিনের স্বপ্ন নাবূওয়াতের চল্লিশ ভাগের একভাগ। স্বপ্নের ব্যাপারে যে পর্যন্ত আলোচনা করা না হয় সে পর্যন্ত এটা পাখির পায়ে (ঝুলে) থাকা জিনিসের মতো। আলোচনা করার সাথে সাথে তা যেন পা হতে পড়ে গেল। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয়, তিনি এ কথাটুকুও বলেছেনঃ আর স্বপ্ন দ্রষ্টা ব্যক্তি যেন জ্ঞানী ব্যক্তি অথবা পছন্দীয় ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো নিকট স্বপ্নের ব্যাপারে আলোচনা না করে।

আবু রাজিন উইকালি রাদি আ তা'আনহু বলেন,  নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলমানের স্বপ্ন নাবূওয়াতের ছিচল্লিশ ভাগের একভাগ। স্বপ্নদ্রষ্টা এ প্রসঙ্গে (কারো সাথে) আলোচনা না করা পর্যন্ত তা পাখির পায়ে ঝুলন্ত জিনিসের অনুরূপ। আর যখনই সে এটা আলোচনা করে তখনই তা ছিটকে পড়ে যায়। 

সহীহ, সহীহাহ্‌ (১২০), মিশকাত তাহকীক ছানী (৪৬২২)।


আবূ হুরাইরা (রাঃ) হাদীস বর্ণনা করতেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে কোন একজন লোক এসে বলল, আমি আজ রাতে একটি ছায়াযুক্ত মেঘ স্বপ্নে দেখতে পেয়েছি এবং তা হতে ঘি ও মধু ঝরে পড়ছে। লোকদের দেখলাম যে, তারা হাতে তুলে তা পান করছে। কেউ বেশি পাচ্ছে এবং কেউ অল্প। আমি আরো দেখতে পেলাম যে, আকাশ হতে মাটি পর্যন্ত একটি রশি ঝুলছে। হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনাকে দেখলাম যে, আপনি সেটা ধরে উপরে উঠে গেছেন, তারপর আরেকজন সেটা ধরে উঠে গেছে, তারপর আরেকজন ধরল এবং সেও উঠে গেল। তারপর অপর একজন ধরলে সেটা ছিড়ে গেল। আবার সেটা জোড়া লেগে গেল এবং সেও তা ধরে উঠে গেল। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার পিতা-মাতা আপনার প্রতি কুরবান হোক! আল্লাহ্‌র শপথ! আমাকে এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে দিন। তিনি বললেনঃ ঠিক আছে, এর তাবীর (ব্যাখ্যা) কর। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, ছায়াযুক্ত মেঘ হলো ইসলামের ছায়া, পতিত ঘি ও মধু হলো কুরআনের কোমলতা, সুমিষ্টতা ও মাধুর্য। আর বেশি ও কম লাভকারী হলকুরবান হোক। আপনি আমাকে বলুন আমি কোথায় ভুল করেছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কসম দিয়ে বলো না। 


সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩৯১৮), বুখারী, মুসলিম।


পছন্দনীয় ও অপছন্দনীয় স্বপ্ন 


হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ স্বপ্ন তিন প্রকারঃ (১) সত্য স্বপ্ন, (২) বান্দার মনের চিন্ত-ভাবনা (যা চিন্তা করে তাই স্বপ্নে দেখে) ও (৩) শয়তানের পক্ষ হতে ভীতি প্রদর্শনমূলক কিছু। অতএব, কেউ যদি অপছন্দনীয় কোন কিছু স্বপ্নে দেখে তাহলে সে যেন ঘুম হতে জেগে নামায আদায় করে। আর তিনি বলতেন, স্বপ্নে (পায়ে) শৃংখল দেখা আমার পছন্দনীয় এবং (গলায়) শৃংখল দেখা অপছন্দনীয়। (পায়ে) শৃংখলের ভাবার্থ হচ্ছে দ্বীনের উপর সুদৃঢ় থাকার ইঙ্গিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলতেনঃ যে আমাকে স্বপ্নে দেখলো তা সত্যিই আমি। কেননা, শাইতান আমার রূপ (সাদৃশ্য) ধারণ করতে পারে না। তিনি আরো বলতেনঃ জ্ঞানী ব্যক্তি অথবা শুভাকাংখী ব্যক্তি ব্যতীত আর কোন ব্যক্তির কাছে স্বপ্নের কথা প্রকাশ করবে না। 

সহীহ, সহীহাহ্‌ (১১৯, ১২০, ১৩৪১), রাওযুন নাযীর (১১৬২)।





এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
ajkerit