যাকাত কি ও যাদের উপর যাকাত ফরজ |

  যাকাতের বিষয়ে কঠোর হুশিয়ারি 

হযরত আবুজর  রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে এলাম। তিনি সে সময় কা’বার ছায়াতে বসে ছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি আমাকে সম্মুখে আসতে দেখে বলেনঃ কা’বার প্রভুর শপথ! তারা কিয়ামাতের দিবসে অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় হাযির হবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি মনে মনে বললাম, আমার কি হল, মনে হয় আমার প্রসঙ্গে তার উপর কোন কিছু নাযিল হয়েছে। আমি বললাম, আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা নিবেদিত হোক! এধরণের লোক কারা? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ অধিক ধনদৌলত আত্মসাৎকারী, কিন্তু যে সব লোক এই, এই ও এই পরিমাণ দিয়েছে সে সব লোক ছাড়া। তিনি সামনে, ডানে ও বামে হাতের ইশারা করলেন। তারপর তিনি বললেনঃ সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার জীবন! যে লোক এধরণের উট অথবা গরু রেখে মৃত্যুবরণ করল যার যাকাত সে দেয়নি, কিয়ামাতের দিন সেগুলো পূর্বাবস্থা হতে বেশি মোটাতাজা হয়ে তার নিকটে আসবে এবং নিজেদের পায়ের ক্ষুর দ্বারা তাকে দলিত করবে এবং শিং দ্বারা গুঁতো মারবে। সবশেষের জন্তুটি চলে যাওয়ার পর আবার প্রথম জন্তুটি ফিরে আসবে। মানুষের সম্পূর্ণ বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত শাস্তির এ ধারা চলতে থাকবে।সহীহ্‌, তা’লাকুর রাগীব (১/২৬৭)।





ফুট নোট 

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতেও একই রকম হাদীস বর্ণিত আছে। আলী (রাঃ) বলেন, যাকাত অমান্যকারীকে অভিসম্পাত করা হয়েছে। কাবীসা ইবনু হুলব তার পিতা থেকে, জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবূ ঈসা বলেন, আবূ যারের হাদীসটি হাসান সহীহ। আবূ যার (রাঃ)-এর নাম জুনদাব ইবনুস সাকান, কারো মতে ইবনু জুনাদা। দাহ্‌হাক ইবনু মুযাহিম বলেন, যার দশ হাজার (দিরহাম) রয়েছে সেই অধিক সম্পদশালী।


   

 

যাকাত আদায় করা আবশ্যক 


রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যখন তুমি তোমার ধন-সম্পদের যাকাত আদায় করে ফেললে, তুমি তোমার কর্তব্যভার পালন করলে।


যঈফ ইবনু মাজাহ (১৭৮৮)।


আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট হতে একাধিক সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি যাকাত নিয়ে আলোচনা করলে এক লোক বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এ ব্যতীতও কি আমার কিছু করার আছে? তিনি বলেনঃ না, তবে বাড়তি (দান-খাইরাত) করতে পার। ইবনু হুজাইরার নাম আব্দুর রহমান ইবনু হুজাইরাহ আল-মিসরী।


 সোনা রুপার যাকাত কিভাবে দিবো


হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত 

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঘোড়া ও গোলামের সাদকা (যাকাত) আমি ক্ষমা করেছি, কিন্তু প্রতি চল্লিশ দিরহাম রূপার ক্ষেত্রে এক দিরহাম সাদকা (যাকাত) আদায় কর। কিন্তু একশত নব্বই দিরহামে কোন সাদকা নেই। যখন তা দুই শত দিরহামে পৌছবে তখন তাতে পাঁচ দিরহাম সাদকা দিতে হবে।


   -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৭৯০)।


আবূ বাকার সিদীক ও আমর ইবনু হাযম (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবূ ঈসা বলেন, আমাশ, আবূ আওয়ানা ও অন্যান্যরা আবূ ইসহাকের সনদের ধারাবাহিকতায় আলী (রাঃ)-এর নিকট হতেও এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। সুফিয়ান সাওরী, ইবনু উআইনা ও অন্যরাও আবূ ইসহাকের বরাতে আল-হারিসের সূত্রে আলী (রাঃ) হতে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। উভয় সূত্রকেই ইমাম বুখারী সহীহ বলেছেন। কারণ, হয়ত আসিম ও হারিস দু’জনের নিকট হতে এটি বর্ণিত আছে।


উট ভেড়া ও ছাগলের যাকাত সম্পর্কে  ধারণা 

 সালিম রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ও তার পিতা হতে বর্ণিত 

সাদকা (যাকাত) প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি ফরমান (অধ্যাদেশ) লিখালেন। তার কর্মচারীদের নিকটে এটা পাঠানোর আগেই তিনি মারা যান। তিনি এটা নিজের তরবারির সাথে রেখেছিলেন। তার মৃত্যুর পর আবূ বাকার (রাঃ) তা কার্যকর করেন। তিনিও মারা যান। উমার (রাঃ)-ও সে অনুযায়ী কাজ করেন। তারপর তিনিও মারা যান। তাতে লেখা ছিল পাঁচটি উটের জন্য একটি বকরী, দশটি উটের জন্য দুটি বকরী, পনেরটি উটের জন্য তিনটি বকরী এবং বিশটি উটের জন্য চারটি বকরীর যাকাত আদায় করতে হবে। পঁচিশ হতে পঁয়ত্রিশ পর্যন্ত উটের জন্য একটি বিনতু মাখায (একটি পূর্ণ এক বছরের মাদী উট); এর বেশি হলে পঁয়তাল্লিশ পর্যন্ত (ছত্রিশ হতে পঁয়তাল্লিশ পর্যন্ত) উটের জন্য একটি বিনতু লাবুন (একটি পূর্ণ দুই বছরের মাদী উট); এর বেশি হলে ষাট পর্যন্ত (ছিচল্লিশ হতে ষাট পর্যন্ত) উটের জন্য একটি হিক্কাহ (একটি পূর্ণ তিন বছরের মাদী উট); 

আবার এর বেশি হলে পঁচাত্তর পর্যন্ত (একষট্টি হতে পঁচাত্তর পর্যন্ত) উটের জন্য একটি জাযাআহ (একটি চার বছরের মাদী উট); আরো বেশি হলে নব্বই পর্যন্ত (ছিয়াত্তর হতে নব্বই পর্যন্ত) উটের জন্য দু’টি বিনতু লাবূন; আরো বেশি হলে একশত বিশ পর্যন্ত (একানব্বই-একশত বিশ) উটের জন্য দু’টি হিক্কাহ এবং যখন একশত বিশের বেশি হবে তখন প্রতি পঞ্চাশ উটের জন্য একটি হিক্কাহ এবং প্রতি চল্লিশ উটের জন্য একটি বিনতু লাবূন যাকাত আদায় করতে হবে।ভেড়া বকরীর যাকাত হলঃ চল্লিশ হতে এক শত বিশ পর্যন্ত বকরীর জন্য একটি বকরী; এর বেশি হলে দু’শত পর্যন্ত দুটি বকরী; এর বেশি হলে তিনশত পর্যন্ত বকরীর জন্য তিনটি বকরী; তিনশতর বেশি হলে প্রতি একশত বকরীর জন্য একটি করে বকরী যাকাত আদায় করতে হবে। তারপর বকরীর পরিমাণ আবার একশত পর্যন্ত না পৌছালে (পুনরায়) কোন যাকাত দিতে হবে না।

যাকাতের ভয়ে (একাধিক মালিকানায়) বিচ্ছিন্নগুলোকে একত্র করা এবং একত্রগুলোকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। এক সাথে দুই শরীকের পশু থাকলে প্রত্যেকে নিজ নিজ অংশের হিসাব করে সঠিকভাবে যাকাত আদায় করবে। যাকাতে বৃদ্ধ এবং ক্রটিযুক্ত পশু গ্রহণ করা হবে না।


   -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৭৯৮)।


গরুর সম্পদ যাকাতের বিধান


আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ত্রিশটি গরুর যাকাত (দিতে হবে) একটি এক বছরের এড়ে বাছুর অথবা বকনা বাছুর। চল্লিশটি গরুর যাকাত (দিতে হবে) একটি দুই বছরের বাছুর।


   -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৮০৪মুআয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবূ ঈসা বলেন, আব্দুস সালাম ইবনু হারব খুসাইফ হতে হাদীসটি এভাবেই বর্ণনা করেছেন। আবদুস সালাম নির্ভরযোগ্য এবং স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন একজন বর্ণনাকারী। শারীক এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন খুসাইফ হতে, তিনি আবূ উবাইদাহ হতে, তিনি তার পিতা আব্দুল্লাহ হতে, আবূ উৰাইদ ইবনু আবদুল্লাহ তাঁর পিতার নিকট কোন প্রকার হাদীস শুনেননি।)।


নাৰী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইয়ামানে (গভর্ণর করে) প্রেরণ করলেন এবং আদেশ দিলেনঃ আমি যেন প্রতি ত্রিশটি গরুর ক্ষেত্রে একটি এক বছরের এড়ে বাছুর অথবা বকনা বাছুর; প্রতি চল্লিশটি গরুর ক্ষেত্রে একটি দুই বছরের বাছুর (যাকাত হিসেবে) এবং প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়সের (জিম্মী) লোকের নিকট হতে এক দীনার (স্বর্ণ মুদ্রা) অথবা একই মূল্যের মাআফির নামক কাপড় (জিয্‌য়া হিসাবে) আদায় করি।


   -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৮০৩)।



কৃষিজাত ফসল ফল ও শস্য এর যাকাত সম্পর্কে মৌলিক ধারণা  


আবু সাদ আল খুদরী রাঃ হতে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাঁচের কম সংখ্যক উটে কোন যাকাত আদায় করতে হবে না; পাঁচ উকিয়ার কম পরিমাণ রূপাতে কোন যাকাত আদায় করতে হবে না এবং পাঁচ ওয়াসাকের কম পরিমাণ ফসলে কোন যাকাত আদায় করতে হবে না।


   -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৭৯৩), বুখারী, মুসলিম


এই হাদীসের ভিত্তিতে আলিমগণ মত প্রকাশ করেছেন যে, পাঁচ ওয়াসাকের কম পরিমাণ শস্যে কোন যাকাত আদায় করতে হবে না। ষাট সা’ পরিমাণে এক ওয়াসাক হয়। অতএব, পাঁচ ওয়াসাকে তিনশত সা’ হবে। সোয়া পাঁচ রোতলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সা’ হত। কূফাবাসীদের এক সা’ হয় আট রোতল পরিমাণে। পাঁচ উকিয়ার কম পরিমাণ রূপার ক্ষেত্রে যাকাত ধার্য হয় না। চল্লিশ দিরহাম পরিমাণে এক উকিয়া হয়। অতএব, পাঁচ উকিয়া পরিমাণে দুই শত দিরহাম হয় পাঁচ যাওদ অর্থাৎ পাঁচের কম সংখ্যক উটের ক্ষেত্রে যাকাত ধার্য হয় না। উটের সংখ্যা পঁচিশে পৌছলে তখন যাকাত হিসেবে এক বছরের একটি মাদী উট আদায় করতে হবে। পঁচিশের কম সংখ্যক উট হলে প্রতি পাঁচটি উটে একটি বকরী যাকাত আদায় করতে হবে।



তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক সম্পদ অর্জন করল, তার উপর বর্ষচক্র পার না হওয়া পর্যন্ত যাকাত আদায় করতে হবে না।

-সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৭৯২)।


সম্পদে যাকাত আদায় করতে হবে না 


ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক সম্পদ অর্জন করল, তার উপর বর্ষচক্র পার না হওয়া পর্যন্ত যাকাত আদায় করতে হবে না।

-সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৭৯২)।

তিনি বলেন, যে লোক সম্পদ অর্জন করল, মালিকের হাতে তা পুরো এক বছর না থাকা পর্যন্ত তাতে যাকাত আদায় করতে হবে না।

   -সনদ সহীহ্‌, মাওকূফ, এটি মারফু হাদীসের মতই।

আবূ ঈসা বলেন, পূর্ববর্তী বর্ণনা হতে এই বর্ণনাটি (সনদের বিচারে) বেশি সহীহ্‌। ইবনু উমারের নিকট হতে অধিক সংখ্যক বর্ণনাকারী এটি মাওকূফ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। আবদুর রাহমান ইবনু যাইদ ইবনু আসলাম হাদীস শাস্ত্রে দুর্বল। তাকে আহমাদ ইবনু হাম্বাল, আলী ইবনুল মাদীনী প্রমুখ হাদীস বিশারদগণ যঈফ বলেছেন এবং তিনি অনেক ভুলের শিকার হন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একাধিক সাহাবা হতে বর্ণিত আছে যে, মালিকের হাতে বর্ষচক্র পার না হওয়া পর্যন্ত অর্জিত মালের যাকাত আদায় করতে হবে না। মালিক ইবনু আনাস, শাফিঈ, আহমাদ ইবনু হাম্বাল ও ইসহাকের এই মত। কিছু সংখ্যক মনীষী বলেছেন, যাকাত বাধ্যকর হওয়ার সমপরিমাণ সম্পদ কারো নিকটে থাকলে এবং বছরের মধ্যে আরো কিছু পরিমাণ মাল এসে যদি তার সাথে যুক্ত হয় তবে এক্ষেত্রে নতুন-পুরাতন সকল মালেরই যাকাত আদায় করতে হবে। নতুনভাবে আমদানী হওয়া মাল ব্যতীত তার নিকটে যাকাত ওয়াজিব হওয়ার মত অন্য কোন মাল না থাকলে এই নতুন অর্জিত সম্পদে বর্ষচত্র অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত যাকাত আদায় করতে হবে না। তার নিকটে যাকাতের নিসাব পরিমাণ মাল আছে, কিন্তু এখনও এক বছর পুরো হয়নি। এরই মাঝে এর সাথে আরো নতুন মাল এসে যুক্ত হল। এক্ষেত্রে পূর্ববর্তী মালের সাথে সাথে এই নতুনভাবে আসা মালেরও যাকাত আদায় করতে হবে। সুফিয়ান সাওরী ও কূফাবাসীগণের এই মত।



অলংকার ও গহনা পত্রের যাকাতের বিধান 

আব্দুল্লাহর স্ত্রী জয়নব রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহু বর্ণনা করেন
, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে সম্বোধন করে বললেনঃ হে মহিলাগণ! তোমাদের গহনাপত্র দিয়ে হলেও তোমরা দান-খয়রাত কর। কেননা, কিয়ামাত দিবসে তোমাদের সংখ্যাই জাহান্নামীদের মধ্যে বেশি হবে।

-পরবর্তী হাদীসের সহায়তায় হাদীসটি সহীহ্‌।
আবূ মুআবিয়া সন্দেহে পতিত হয়ে বলেছেন, যাইনাবের ভাইয়ের ছেলের নিকট হতে আমর ইবনু হারিস বর্ণনা করেছেন। অথচ সঠিক হল- আমর ইবনু হারিস যাইনাবের ভাইয়ের ছেলে। আমর ইবনু শুআইব হতে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত আছেঃ গহনাপত্রের যাকাত আদায় করতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদেশ করেছেন। অবশ্য এ হাদীসের সনদ প্রসঙ্গে সমালোচনা আছে।
আলিমগণের মধ্যে অলংকারপত্রের যাকাত আদায়ের ব্যাপারে মতবিরোধ আছে। একদল সাহাবা ও তাবিঈ বলেছেন, অলংকারাদির যাকাত আদায় করতে হবে, তা স্বর্ণের কিংবা রূপারই হোক না কেন। সুফিয়ান সাওরী, ও ইবনুল মুবারাকের একই রকম মত। আরেক দল সাহাবা, যেমন ইবনু উমার, আইশা, জাবির ইবনু আবদুল্লাহ ও আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেছেন, অলংকারাদির উপর যাকাত আদায় করা ওয়াজিব নয়। কয়েকজন ফিক্‌হবিদ তাবিঈ হতেও একইরকম বর্ণিত আছে। ইমাম মালিক, শাফিঈ, আহমাদ ও ইসহাক এরকমই মত প্রকাশ করেছেন।



 যে ব্যক্তি যাকাতের মাল ভোগ করতে পারবে 


আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ হতে বর্ণিত 
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানুষের নিকটে যে লোক হাত পাতে (সাহায্য প্রার্থনা করে) অথচ তার এটা হতে বাঁচার মত সম্বল আছে, সে লোক কিয়ামাত দিবসে তার মুখমণ্ডলে এই সাহায্য চাওয়ার ক্ষত নিয়ে আল্লাহ্ তা’আলার সামনে উপস্থিত হবে। প্রশ্ন করা হল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! কি পরিমাণ সম্পদ থাকলে সে লোক অন্য কারো নিকটে হাত পাততে পারবে না? তিনি বললেনঃ পঞ্চাশ দিরহাম বা সমমূল্যের স্বর্ণ।

   -সহীহ্‌, সহীহ্‌ আবূ দাঊদ (১৪৩৮), মিশকাত (১৮৪৭)।

যে ব্যক্তি যাকাতের মাল ভোগ করতে পারবে না 

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অবস্থাপন্ন সচ্ছল ও সুস্থ-সবল লোকের জন্য যাকাত নেয়া বৈধ নয়।

   -সহীহ, মিশকাত (১৪৪৪), ইরওয়া (৮৭৭)।

আবূ হুরাইরা, হুবশী ইবনু জুনাদা ও কাবীসা ইবনু মুখারিক (রাঃ) হতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবূ ঈসা আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। এ হাদীসটি শুবাও সা’দ ইবনু ইবরাহীম হতে উল্লেখিত সনদে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এ হাদীসকে তিনি মারফূহিসেবে বর্ণনা করেননি। অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “অবস্থাপন্ন সচ্ছল লোক এবং শক্তিমান ও সুস্থ দেহের অধিকারী লোকের পক্ষে অন্য কারো নিকটে হাত পাতা জায়িয নয়।”
   এ প্রসঙ্গে আলিমগণের অভিমত এটাই যে, যদি শক্তিমান সুঠাম দেহের অধিকারী লোক সাহায্যের মুখাপেক্ষী হয় এবং যদি তার নূন্যতম প্রয়োজন মেটানোর মত সম্বল না থাকে তবে সে লোককে যাকাত প্রদান করলে যাকাত আদায় হয়ে যাবে। কিছু মনীষীর মতে, ভিক্ষাবৃত্তি প্রসঙ্গে এ হাদীসটি বলা হয়েছে (যাকাত গ্রহণ জায়িয হওয়া বা না হওয়া প্রসঙ্গে নয়) ।

 যাকাত দের মর্যাদা 


হুৱাইরা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক বৈধ উপার্জন হতে দান খায়রাত করে, আর আল্লাহ তা’আলা হালাল ও পবিত্র মাল ছাড়া গ্রহণ করেন না, সেই দান দয়াময় রাহমান স্বয়ং ডান হাতে গ্রহণ করেন, তা যদি সামান্য একটি খেজুর হয় তাহলেও। এটা দয়াময় রাহমানের হাতে বাড়তে বাড়তে পাহাড় হতেও বড় হয়ে যায়; যেভাবে তোমাদের কেউ তার দুধ ছাড়ানো গাভী বা ঘোড়ার বাচ্চাকে লালন পালন করে থাকে।

   -সহীহ্, জিলালুল জুন্নাহ (৬২৩), তা’লীকুর রাগীব, ইরওয়া (৮৮৬), বুখারী, মুসলিম।।

নোটবুক ঃ আশাকরি আপনি আমাদের ওয়েবসাইটে এসে কাঙ্খিত তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। 

এরকম আরো অসংখ্য হাদিস ও শিক্ষামূলক পোস্ট পেতে আমাদের এই বাংলা ব্লক ওয়েবসাইট এর সাথেই থাকুন । 

প্রয়োজনীয় সকল তথ্য পেতে ভিজিট করুন জে কে ব্লগ বিডি ডট কম ওয়েবসাইটডে ও যোগাযোগ করুন জিমেইল ,টেলিগ্রাম, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও জে কে ব্লক বিডি ডট কম ওয়েবসাইটে। 

আমাদের এই জে কে বাংলা ব্লগ বিডি ওয়েবসাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। 



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
ajkerit