রোজা কি এবং কেন রাখবো | Roja ki And keno Ragbo

 

 রোজা রাখা ফরজ


হযরত আয়েশা রাঃ হতে বর্ণিত তিনি বলেন, 

জাহিলী যুগে কুরায়শগণ ‘আশূরার দিন সওম পালন করত। আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- ও পরে এ সওম পালনের নির্দেশ দেন। অবশেষে রমযানের সিয়াম ফরয হলে আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যার ইচ্ছা ‘আশূরার সিয়াম পালন করবে এবং যার ইচ্ছা সে সওম পালন করবে না।




রোজার ফজিলত 


হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, 

আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সিয়াম ঢাল স্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মূর্খের মত কাজ করবে না। যদি কেউ তার সাথে ঝগড়া করতে চায়, তাকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুই বার বলে, আমি সওম পালন করছি। ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই সওম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহ্‌র নিকট মিসকের সুগন্ধির চাইতেও উৎকৃষ্ট, সে আমার জন্য আহার, পান ও কামাচার পরিত্যাগ করে। সিয়াম আমারই জন্য। তাই এর পুরস্কার আমি নিজেই দান করব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশ গুণ।

 রোজা পাপ কাজে থেকে বিরত রাখে

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ হতে বর্ণিত 

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি, তাঁর এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহ্‌র কোন প্রয়োজন নেই।তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেছেন, সওম ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তাঁর নিজের জন্য, কিন্তু সিয়াম আমার জন্য। তাই আমি এর প্রতিদান দেব। সিয়াম ঢাল স্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন সিয়াম পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাঁকে গালি দেয় অথবা তাঁর সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি একজন সায়িম। যার কবজায় মুহাম্মাদের প্রাণ, তাঁর শপথ! অবশ্যই সায়িমের মুখের গন্ধ আল্লাহ্‌র নিকট মিস্‌কের গন্ধের চাইতেও সুগন্ধি। সায়িমের জন্য রয়েছে দু’টি খুশী যা তাঁকে খুশী করে। যখন সে ইফতার করে, সে খুশী হয় এবং যখন সে তাঁর রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন সওমের বিনিময়ে আনন্দিত হবে।


রোজা রেখে ভুলে কোন কিছু খেয়ে ফেলা


আত্বা (রহঃ) বলেন, নাকে পানি দিতে গিয়ে যদি তা কণ্ঠনালীতে ঢুকে যায়, আর সে ফিরাতে সক্ষম না হয় তা হলে দোষ নেই । হাসান (রহঃ) বলেন, সায়িম ব্যক্তির কণ্ঠনালীতে মাছি ঢুকে পড়লে তার কিছু করতে হবে না । হাসান এবং মুজাহিদ (রহঃ) বলেছেন, সায়িম ব্যক্তি যদি ভুলবশতঃ স্ত্রী সহবাস করে ফেলে, তবে তার কিছু করতে হবে না ।

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সওম পালনকারী ভুলক্রমে যদি আহার করে বা পান করে ফেলে, তাহলে সে যেন তার সওম পুরা করে নেয়। কেননা আল্লাহ্‌ই তাকে পানাহার করিয়েছেন।


রোজা রেখে যৌন মিলন করা

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে একটি মারফূ হাদীসে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি ওযর এবং রোগ ব্যতীত রমযানের একটি সওম ভেঙ্গে ফেলল, তার সারা জীবনের সওমের দ্বারাও এ কাযা আদায় হবে না, যদিও সে সারা জীবন সওম পালন করে । ইব্‌নু মাস‘উদ (রাঃ)-ও অনুরূপ কথাই বলেছেন । সা’ঈদ ইব্‌নু মুসায়্যাব, শা’বী, ইব্‌নু যুবায়র, ইব্রাহীম, কাতাদাহ এবং হাম্মাদ (রহঃ) বলেছেন, তার স্থলে একদিন কাযা করবে ।


 সফরে রাজা রাখার বিধান


তইবনে আবু আওফা রাঃ হতে বর্ণিত তিনি বলেন, কোন এক সফরে আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে ছিলাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে বললেনঃ সওয়ারী হতে নেমে আমার জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! সূর্য এখনো অস্ত যায়নি। তিনি বললেনঃ সওয়ারী হতে নেমে আমার জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! সূর্য এখনো ডুবেনি। তিনি বললেনঃ সওয়ারী হতে নামো এবং আমার জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। অতঃপর সে সাওয়ারী হতে নেমে ছাতু গুলিয়ে আনলে তিনি তা পান করলেন এবং হাতের ইঙ্গিতে বললেনঃ যখন দেখবে রাত এদিক হতে ঘনিয়ে আসছে তখন বুঝবে, সওম পালনকারী ব্যক্তির ইফতারের সময় হয়েছে। জারীর (রাঃ) এবং আবূ বাকর ইব্‌নু ‘আইয়াশ...ইব্‌নু আবূ ‘আওফা (রাঃ) হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, কোন এক সফরে আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলাম।


  কাযা রোজা রাখার সময় 


ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, পৃথক পৃথক রাখলে কোন ক্ষতি নেই । কেননা আল্লাহ বলেছেন, ‘অন্যদিনে এর সংখ্যা পূর্ণ করবে’ (আল-বাকারাহ (২) : ১৮৪) । সা’ঈদ ইব্‌নু মুসায়্যাব (রহঃ) বলেছেন, রমযানের কাযা আদায় না করে যুলহাজ্জ মাসের প্রথম দশকে সওম পালন করা উচিত নয় । ইবরাহীম নাখ’ঈ (রহঃ) বলেন, অবহেলার কারণে যদি পরবর্তী রমযান এসে যায় তাহলে উভয় রমযানের সওম এক সাথে আদায় করবে । মিসকীন খাওয়াতে হবে বলে তিনি মনে করেন না । আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত । একটি মুরসাল হাদীসে এবং ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, সে খাওয়াবে; অথচ আল্লাহ তাআলা খাওয়ানোর কথাটি উল্লেখ করেননি । বরং তিনি বলেছেন, ‘অন্যদিনে এর সংখ্যা পূর্ণ করবে’- (আল-বাকারাহ : ১৮৪) ।


 ইফতার করার সময় 

আব্দুল্লাহ ইবনে আবু আওফা রাঃ হতে বর্ণিত 

তিনি বলেন, কোন এক সফরে আমরা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম। আর তিনি ছিলেন সওমের অবস্থায়। যখন সূর্য ডুবে গেল তখন তিনি দলের কাউকে বললেনঃ হে অমুক! উঠ। আমাদের জন্য ছাতু গুলে আন। সে বলল, সন্ধ্যা হলে ভাল হতো। তিনি বললেনঃনেমে যাও এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলে আন। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! সন্ধ্যা হলে ভাল হতো। তিনি বললেনঃ নেমে যাও এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলে আন। সে বলল, দিন তো এখনো রয়ে গেছে। তিনি বললেনঃ তুমি নামো এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলে আন। অতঃপর সে নামল এবং তাঁদের জন্য ছাতু গুলে আনল। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা পান করলেন, অতঃপর বললেনঃ যখন তোমরা দেখবে, রাত একদিক হতে ঘনিয়ে আসছে, তখন সওম পালনকারী ইফতার করবে।

  যেদিন রোজা রাখা যাবে না


হযরত আবু ওবাইদ রাঃ হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি একদা ঈদে ‘উমার ইব্‌নুল খাত্তাব (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম, তখন তিনি বললেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই দুই দিনে সওম পালন করতে নিষেধ করেছেন। (ঈদুল ফিতরের দিন) যে দিন তোমরা তোমাদের সওম ছেড়ে দাও। আরেক দিন, যেদিন তোমরা তোমাদের কুরবানীর গোশত্ খাও। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, ইব্‌নু ‘উয়ায়নাহ (রহঃ) বলেন, যিনি ইব্‌নু আযহারের মাওলা বলে উল্লেখ করেছেন, তিনি ঠিক বর্ণনা করেছেন; আর যিনি ‘আবদুর রহমান ইব্‌নু ‘আওফ (রাঃ)- এর মাওলা বলেছেন, তিনিও ঠিক বর্ণনা করেছেন।

হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, দু’ (দিনের) সওম ও দু’ (প্রকারের) ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ করা হয়েছে, ঈদুল ফিতর ও কুরবানীর (দিনের) সওম এবং মুলামাসা ও মুনাবাযা (পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয়) হতে।

    ৷ ইফতারের দোয়া 

ইফতার করার পূর্বে

اللّٰهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ

হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টির জন্যেই রোজা রেখেছি এবং আপনার দেয়া রিজিক দিয়েই ইফতার করছি। [আবু দাউদ, হাদীস ২৩৬০]

ইফতার করার পর

ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ العُرُوْقُ، وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللّٰهُ 

পিপাসা মিটেছে, শিরাগুলো সিক্ত হয়েছে এবং আল্লাহ্‌ চান তো সওয়াব সাব্যস্ত হয়েছে।

[আবূ দাউদ, নং ২৩৫৯]


أَفْطَرَ عِنْدَكُمُ الصَّائِمُوْنَ، وَأَكَلَ طَعَامَكُمُ الْأَبْرَارُ، وَصَلَّتْ عَلَيْكُمُ الْمَلاَئِكَةُ 

আপনাদের কাছে রোযাদাররা ইফতার করুন, আপনাদের খাবার যেন সৎলোকেরা খায়, আর আপনাদের জন্য ফিরিশতারা ক্ষমা প্রার্থনা করুন।

সুনান আবি দাউদ, নং ৩৮৫৬; ইবন মাজাহ, নং ১৭৪৭।


বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ

এরকম আরো অসংখ্য হাদিস ও শিক্ষামূলক পোস্ট পেতে আমাদের এই বাংলা ব্লক ওয়েবসাইট এর সাথেই থাকুন । 

প্রয়োজনীয় সকল তথ্য পেতে ভিজিট করুন জে কে ব্লগ বিডি ডট কম ওয়েবসাইটডে ও যোগাযোগ করুন জিমেইল ,টেলিগ্রাম, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও জে কে ব্লক বিডি ডট কম ওয়েবসাইটে। 

আমাদের এই জে কে বাংলা ব্লগ বিডি ওয়েবসাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। 






এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
ajkerit