রহস্যময় বাংলো | রহস্যময় বাংলো বাড়ি | ভূতের বাড়ি | Rohosshomoy Banglo Bari - Vuter bari

  রহস্যময় বাংলো |রহস্যময় বাংলো বাড়ি 

      পর্ব-১ 

আমাদের গল্পের মুখ্য চরিত্র হলো বছর ২৬ এর রাজীব।এই ভূতের রহস্য উৎঘাটনে অংশ নেয় তার সঙ্গ নেয় তার আরও তিন বন্ধু জামাল,সাগর আর অনিক। পলাশ একটু ভীতু প্রকৃতির হওয়ায় সে এই ভুত রহস্য উৎঘাটন থেকে বিরত থাকে। 

রাজীবের কোনো কালেই ভূতের ওপর তেমন কোনো বিশ্বাস ছিল না।ভুত কি!? টা কি সত্যিই আছে!? এটা জানার জন্য তার মন উৎসুক হয়ে আছে। তার ইচ্ছে কোনো এক ভৌতিক জায়গায় থাকবে আর ভূতের অস্থিত্ব বিষয়ের সত্যতা যাচাই করবে। তাই সে সিদ্ধান্ত নিলো অপমৃত্যু হয়েছে এমন এক ফ্ল্যাট কিনবে।তাই সে খোঁজ নিতে থাকে।কিন্তু বাড়ির লোকের এবিষয়ে কোনো মত নেই। বাবা - মা অনেক বোঝানোর চেষ্টা করছে যাতে রাজীব তার সিদ্ধান্তও বদলে নেয়। কিন্তু রাজীব বড়োই একগুঁয়ে সে যা করবে বলে ঠিক করে তা সে করেই ছাড়ে। তার বাবা - "মা শেষ বারের মতো চেষ্টা করে বলে "ঠিক আছে তুই ফ্ল্যাট কেন কিন্তু সেখানে আমরা কেউ যাবো না।" । কিন্তু কোনো ভাবেই ছেলেকে আটকানো গেলো না। 

সে বললো: " ঠিক আছে তোমাদের যেতে হবে না।" এই বলে রাজীব বাড়ির থেকে বেরিয়ে অফিস এ চলে গেলো।বিকেলে অফিস থেকে ফিরে হাত - মুখ ধুয়ে এসে ক্লাবে গেলো আড্ডা দিতে। সেখানে গিয়ে খানিকক্ষণ ক্রাম খেলে বাইরে এসে বসলো। তারপরে তাকে সেখানে দেখে অন্য বন্ধুরা জড়ো হলো। রাজীব কথায় কথায় তার বন্ধুদের কাছে বললো যে সে এমন এক ফ্ল্যাট কিনতে চায় যেখানে আগে কোনো অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বন্ধুরা জানে যে , সে ভূতের সন্ধান করতে চায়। রাজীব জানায় যে তার বাড়ির কেউ সেখানে থাকবে না বলে দিয়েছে।

শুনে তখন পলাশ বলে থাক তাহলে "তুইও যাস না.. যদি কিছু হয়ে যায় তখন কি হবে!দেখার লোকও তো থাকবে না।"

রাজীব: " কেনো তোরা থাকবি না!? আমি তো ভাবলাম রাতে ওখানেই পার্টি করবো বেশ মজা হবে" 

একথা শুনে বাকি তিন বন্ধু সহমত পোষণ করল।কিন্তু ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পলাশ বলে: " তোরা গেলে যা আমি যাচ্ছি না" একথা বলে সে সেখান থেকে চলে গেলো।

পাঁচ বন্ধু |পাঁচ বন্ধুর ভূতের গল্প 

গল্পটা হলো পাঁচ বন্ধুর রাজীব,পলাশ(ইতিমধ্যেই তাদের নাম পেয়েছি),সাগর,অনিক আর জামাল(বাকি তিন জন)। পলাশ একটু ভীতু প্রকৃতির কিন্তু বাকি চারজন খুবই সাহসী ।

পলাশ চলে গেলে আবার সেই টপিকেই কথা বার্তা শুরু হয়।

রাজীব: " সে সব তো হবেই.. কিন্তু এরকম ফ্ল্যাটের সন্ধান কথায় পাই!?"

জামাল: " হ্যাঁ.. এটা গভীর চিন্তার বিষয়!"( গালে হাত দিয়ে চিন্তা মগ্ন হয়ে বললো)

অনিক: " আচ্ছা, চেনা পরিচয়ের মধ্যে খবর নিলে কেমন হয়??"

সাগর: "হ্যাঁ.. তা করা যায়... কিন্তু শুধু পরিচয়ের মধ্যে খবর না নিয়ে খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিলে ভালো হয়।"

জামাল: "good ide...আমার এক পরিচিত আছে মানে আমার এক কলিগের দাদা, উনি খবরের কাগজের প্রিন্ট করেন... আমি তাহলে ওনার সাথে কথা বলি.."

রাজীব: " okk.. তুই তাহলে তাই কর।"

এই বলে তখনকার মতো কথা বার্তা ওখানেই সমাপ্ত করে যে যার মতো বাড়ির উদেশ্য চলে যায়।

রাজিবের বাড়ি 

রাজীব আসার পথে ভাবতে থাকে যদি এরকম একটা ফ্ল্যাট পেয়ে যায় তাহলে আমি ওখানে থেকে প্রমাণ করে দেবো ওসব ভুত - থুট বলে আদেও কিছুই হয় না। ওগুলো মানুষের মনের ভুল ধারণা। হ্যাঁ এনার্জি থাকে কিন্তু সোজা ভুত এটা অসম্ভব। (এই কথাগুলো নিজের মনে ভাবতে ভাবতে রাজীব শেষটায় হেসে ফেললো)।

বাড়ি ফিরে একটু রেস্ট নিলো রাজীব। সারাদিনের ক্লান্তির মাঝে তার একটু বিনোদন মানে তার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া আর এই ফোনের যুগে একটু ফোন ঘাটা। অনেক রাত হলো এবার সে খেয়ে ঘুমাবে কাল থেকে সেই একই রুটিন। তাই সে মাকে খেতে দেবার জন্য হাক ডাক করতে থাকে। 

রাজিবের মা বাবা

মা উত্তর দেয় : " নিজের খাবার নিজে বেড়ে খেয়ে নাও। "(খানিকটা রেগে উত্ত দিল মা)

রাজীব :"তোমাদের খাওয়া হয়ে গেছে?"

মা: " না হয়নি.. তুমি খাও আমরা আসছি"

রাজীব:" তাহলে আমাকে নিয়ে নিতে বলছো কেনো?? তোমরাও তো খাবে আমাকেও বেড়ে দাও প্রতি দিনের মতো..! কিছু কি হয়েছে?" 

মা: " কি আর হবে বলো। হওয়ার মতো কি আর কিছু বাকি রেখেছো নাকি আমাদের কোনো কথা শোনো!?"

রাজীব মায়ের জিলাপির মতো গোল গোল কথা বুঝতে না পেরে মাকে বলে: "কি হয়েছে সোজাসুজি বলো । আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না তুমি কি বলছো!!"

মা: "তোমাকে তো আমি আর তোমার বাবা মিলে বুঝিয়ে কোনো মতে পারে উঠছি না। ভৌতিক কান্ড আছে এমন জায়গায় তুমি থাকবেই!! আমরা তো আর সেখানে যাবো না তোমার সাথে তোমার খাবার বেড়ে দেবার জন্য তাই নিজের কাজ নিজে করতে শেখো।"

রাজীব: " ও এই ব্যাপার!! তাহলে এসব কান্ড আমাকে বিরত রাখার জন্য!!"

মায়ের কথায় রাজীব বেশ কিছু রেগে গেলো তাই খাবার না খেয়েই উঠে চলে গেলো এবং দরজা বন্ধ করে নিজের রুমে শুয়ে পড়লো।মা বাইরে থেকে চিৎকার করে বলতে থাকলো : " ভালো কথা বললেই তো আমার উপর রাগ দেখবি, মায়ের মনের চিন্তা বোঝার তো ক্ষমা তোর নেই। নিজের যখন সন্তান হবে তখন বুঝবি কেমন লাগে ।"

বাবা: " আহ্ থামো.. দেখলে তো তোমার এসব কথা জন্য ছেলেটা না খেয়েই চলে গেলো.."

এই বলে বাবাও না খেয়ে শুয়ে পড়লো।

মা: " কি হলো তুমি খাবে না?"

বাবা: ( একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে) " না... আমি আর খেয়ে কি করবো!!" ☹

এই বলে বাবা ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল। মা সজোরে বলে উঠলো : " হ্যাঁ.. তোমরা বাপ - ব্যাটা মিলে আমাকেই তো ভুল বুঝবে... যত জ্বালা হয়েছে আমার।" মা খানিকক্ষণ চেয়ারে বসে রইলো হয় তো বসে বসে নিজেকেই দোষারোপ করতে থাকলো।ছেলেটা সারাদিন কাজ করে বাড়ি ফিরে রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল সেই জন্য ছেলের বাবাও খেলো না। এই কথা গুলো এখন না বললেই ভালো হতো।এসব ভেবে উনিও না খেয়ে শুয়ে পড়লেন।

সকাল হলো.. যেহেতু আগের দিন ছেলে কিছু খায়নি তাই মা আজ ছেলের জন্য ভালো টিফিন তৈরি করে দিয়েছে মায়ের মন তো... রাজীবের ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে যায় তাই সে না খেয়েই টিফিন নিয়ে কাজে বেরিয়ে পড়ে। অফিসে গিয়ে রাজীব খোঁজখবর নেয় কারোর জানা শোনা এরকম কিছু আছে কিনা। তার এক কলিগ জানায়:"এরকম একটা জায়গা আছে কিন্তু ফাঁকা জায়গা ওখানে বাড়ি বানিয়ে নিতে হবে...কিন্তু বাড়ি বানানো সহজ হবে না।পরিত্যাক্ত বলে ওখানে কেউ যায় না.. ওখানে এমনি ঘুরতে যেতে পারো"


ভুতুড়ে বাড়ি | ভুতুড়ে ফ্লাট

রাজীব: " না বাড়ি বানানো না তাহলে সে অনেক ঝামেলা.. ভুতুড়ে ফ্ল্যাট কিনবো"

কলিগ : " হ্যাঁ ফ্ল্যাট কেনাই ভালো। তবে তুমি যদি চাও ওখান থেকে এমনই ঘুরে আসতে পারো"

রাজীব: " হ্যাঁ চলো তাহলে একদিন ঘুরে আসি"

ঠিক হলো ছুটির দিনে মানে রবিবার ওই জায়গায় যাও হবে।এই কথা বার্তা বলার পর সে ব্যাগ থেকে টিফিন বার করে .. দেখলো আজ মা ভালো কিছু রান্না করে দিয়েছে ।  সে খেতে ভাবতে থাকে কাল রাতে না খেয়ে ভালোই হয়েছে নাহলে এত ভালো টিফিন আজ পেতাম না।টিফিন শেষ করে সে আবার নিজের কাজে লেগে পরে... অফিসের কাজের খুব চাপ এই কয়দিন।তাই অফিস থেকে ফিরে কয়দিন আর ক্লাবেও যায় না আড্ডা দিতে, ফলে জানতেও পারে না যে ফ্ল্যাট দেখার কাজ কতদূর পৌঁছালো। রাজীবের কাজের চাপে কিভাবে যে দিনগুলো কেটে গেলো বুঝতে পারলো না। এত কাজের শেষে শনিবার রাতে একটু হাফ ছেড়ে বাঁচল যেনো সে । একটু শান্তির ঘুম ঘুমোলো। কাল রবিবার কাল আবার কথা হয়ে আছে সেই ভুতুড়ে প্লেস দেখতে যাবে কলিগের সাথে। 

পরদিন সকাল হলো ঘুম ভাঙতেই না ভাঙতেই অফিসের সেই কলিগ ফোন করলো। ফোন করে বললো রেডী হয়ে নিতে । বেশি রাত করে যাওয়া যাবে না ওখানে শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে সেই জায়গা । নাম রহস্যপুর। বাড়ি ফিরতে দেরি হয়ে যাবে এখনই খেয়ে রেডী হয়ে নিতে সকাল ১১ টায় রওনা হবে। রাজীব ফোন রেখে তাড়াতাড়ি করে রেডী হয়ে নিল। তারপরে ঠিক এগারোটায় বেরিয়ে পড়লো কলিগের সাথে।

গরমকালের বাংলো বাড়ি |সময়টা ছিলো  গ্রীষ্মকাল

সময়টা ছিল গরমকাল , শুধু গরমকাল না জৈষ্ঠ্য মাসের গরমকাল ... মানে বুঝতে পারছো কত গরম হতে পারে... আম, কাঁঠাল পাকা গরম পুরো।তপ্ত গরমে তারা ঠিক করে গাড়ি ভাড়া করে সেখানে যাবে।সেই হিসাব মতো একটা গাড়ি ভাড়া করে তারা। তারপরে যাত্রা করে সেই রহস্য পুরের সন্ধানে। ৫ কিলোমিটার যেতে অনেক সময় লাগবে তাই যাবার পথে হাই রোডের পাশে গাড়ি থামিয়ে একটা ধাবায় তারা মধ্যাহ্ন ভোজ সেরে নিল । ধাবাটা ছিল রহস্যপুর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে। ধাবাটার ক্ষয় প্রাপ্ত অবস্থা , প্রায় জনমানব শূন্য একটা স্থান, পাশে বট গাছের সারি আর সেখানে ঝুলে আছে অসংখ্য বাদুর। দোকানদারের সাথে কথা বলে জানা গেলো বিক্রি বেশ ভালোই হয়, রাতে যেসব ট্রাকগুলো চলে প্রায় সব ট্রাকগুলো এখানে থামে। কয়েক কিলোমিটার এর মধ্যে আর দোকান - পশার নেই। হয়তো দোকানদার পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেবার জন্যই তার দোকানের কোনো সংস্কার করে না। খেয়ে একটু বিশ্রাম করে তারা বেরিয়ে পরে আবার রহস্যপুরের জন্য। গাড়িতে রাজীব তার কলিগকে বলে : " রহস্যপুর নামের মধ্যে লুকিয়ে আছে কত রহস্য কি বলো?"

কলিগ: "হ্যাঁ তা যা বলেছ। এই রহস্যপুরের অনেক রহস্য আছে জানো?"

রাজীব : " কি রহস্য?"

কলিগ: " আমার ঠাকুরদার মুখে শুনতাম এই জায়গায় কথা, কয়বার এসেছি আগে ঠাকুরদার সাথে। তখন এই ধাবা ছিল না তবে এই বত গাছ দেখছো আরো অনেক বট ছিল। আর রাতে খালি পেঁচার ডাক।গা ছমছম করে পরিবেশ পুরো।" 

রাজীব : " বেশ ভৌতিক পরিবেশ তো! রহস্যপুরের ৩ কিমি আগেই এরকম ভুতুড়ে পরিবেশ জানি না ওখানের পরিবেশ কেমন হবে। আমার তো ভেবেই খুব মজা লাগছে।" 

ড্রাইভার সজোরে একটা ব্রেক কষে আর বলে :"সামনে রাস্তা খারাপ মনে হচ্ছে গাড়ি আর সামনে যাবে না। বাকি ১০ মিনিটের পথ আছে হেঁটে যেতে হবে।" 

ভূতের গল্প |ভূতের বাড়ি 

গল্পঃ করতে করতে কখন যে এতটা রাস্তা চলে এসেছে তা বোধগম্য হলো না দুজনের। রাজীব বললো : " এতটা তো চলে এসেছি তবে আর বাকি ১০ মিনিটের রাস্তা যেতে কতই বা সময় লাগবে !!"

কলিগ: " হ্যাঁ... ঠিকই বলেছ আমরা হেঁটেই চলে যাবো, অসুবিধা হবে না।"

ড্রাইভার: " বেশ তাহলে আপনারা যান, আমি এখানেই গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করবো। আর হ্যাঁ সন্ধ্যা নামার আগেই চলে আসবেন। জায়গাটা সুবিধার না।"

রাজীব জানার জন্য উৎসুক ছিল কেনো সুবিধার না কিন্তু সন্ধ্যার আগে ফিরতে হবে জেনে সে সে ঠিক করে ফেরার সময় পুরোটা জেনে নেবে। কথা না বাড়িয়ে তারা রওনা হয়। 

তারা যখন রহস্যপুড়ে পৌঁছালো তখন ঘড়িতে ঠিক বাজে ৩ তে বেজে ১৫ মিনিট । পুরো শুনশান জায়গা। এতই নিস্তব্ধ যে শুধু তাদের পায়ের আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই সোনা যাচ্ছিল না। চারিদিকে বড়ো বড়ো বট, শেওড়া,তেতুল,তাল গাছের সমাহর। শহরের অর্ধেক বর্জ্য পদার্থ এখানে ফেলা হয়। মাটির রাস্তা, কয়েক মাইলের পর মাইল ধুধু ফাঁকা । খানিকটা এগিয়ে দেখা গেলো বিশাল বড়ো গর্ত , তার যে কতখানি গভীর হতে পারে উপর থেকে দেখে আন্দাজ লাগানো খুবই মুশকিল। এর মধ্যে কেউ পরে গেলে তাকে আর উদ্ধার করা সম্ভব হবে না। এত বড়ো গর্ত দেখে রাজীব প্রশ্ন করে : " আচ্ছা দীপ এতো বড়ো গর্ত কিসের ??"( রাজীবের অফিস কলিগের নাম দীপ) 

দীপ: " এগুলো প্রোমোটারের কাজ, ওরা এখন থেকে মাটি নিয়ে গিয়ে বাড়ির বা ফ্ল্যাট বানায়। আগে এসব ছিল না। "

রাজীব: " আচ্ছা "

দীপ: " হ্যাঁ.. একবার সোনা গিয়েছিল কোনো এক প্রোমোটার এখান থেকে মাটি নিয়ে বাংলো বানায় । রাতে সেই বাংলোয় এমন সব আজব কাণ্ড হতো যাতে লোকে বেশিদিন টিকতে পারত না। তাই আর কেউ এখন থেকে মাটি নেয় না আর।"

রাজীব : " তাহলে তো লোকটার অনেক লস হলো।" 

দীপ : " হ্যাঁ... অতো বড়ো বাংলো প্রায় ফাঁকা পড়ে আছে।"

রাজীব: " কোথায় সেই বাংলো? জানো তুমি?"

দীপ: " হ্যাঁ জানি.. এখন থেকে আর ১ কিলোমিটার দূরে সেই বাংলো। যে বানিয়েছিল সেই লোকের গলা পচা দেহ ওই বাংলো থেকে উদ্ধা করা হয়। পরে ওর ছেলে তালা বন্ধ করে ফেলে রেখেছে।"

রাজীব: " মার্ডার কেস নাকি? বাবার সম্পত্তির লাভ ছেলে মেরে ফেলেছে হয়তো।"

দীপ : " না। ওনার বউ মারা গেছে তার নামে সেই বাড়ি। ছেলে বিদেশে থাকে, ওনাকে অনেক বার যেতে বলেছে কিন্তু যায়নি।"

রাজীব : " তাহলে কি ভাবে মরলো??"

ভুতের গল্পের রহস্য 

দীপ : " সেটাই রহস্য.. এক ঝড়ের রাতে তিনি ওই বাংলোয় আসে। তারপরে আর কোনো খোঁজ নেই । দুই দিন হয়ে গেছে দেখে বাড়ির কাজের লোক ছেলের নির্দেশে ড্রাইভারসহ এসে দেখে ওই অবস্থা। দেখে ওরাই পুলিশে খবর দেয়।"

রাজীব: " পুলিশ কিছু খুঁজে বার করতে পারেনি? ময়না তদন্তের রিপোর্ট কি ছিল??"

দীপ: " ওনার মৃত্যু রহস্যের মধ্যে নিমজ্জিত। ওনার ঘাড়ে নাকি কামড়ের দাগ আর পিঠে নখের আঁচড়ের দাগ পাওয়া গেছিলো। পরে ওনার ছেলে ওই বাংলোয় তালা দিয়ে আবার বিদেশে চলে যায়.. এখন ওখানে নাকি ওনার চিৎকার সোনা যায় মাঝে মাঝে.. যারা যায় আসে ওখান দিয়ে তারা বলে।"

রাজীব: " তুমি এত কিছু জানলে কি করে?"

দীপ : " আমার বাবার বন্ধু ছিল উনি। ওনার নাম দীপঙ্কর চৌধুরি।"

রাজীব: " ও আচ্ছা।"( ঘটনাটা শোনার পর দিয়েই রাজীব খুব এক্সসাইটেড হয়ে আছে, ভাবতে থাকে বাংলোটা যদি সে থাকার সুযোগ পেত।)

তার ভাবনায় বিঘ্ন ঘটিয়ে দীপ বলে : " সন্ধ্যে হতে চললো ... চলো এবার ফেরা যাক।"

রাজীবের আরো থাকার ইচ্ছা ছিল কিন্তু দীপ আর ড্রাইভারের সতর্কতা শুনে সে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। তারপরে কিছুক্ষনের মধ্যেই গাড়ির কাছে পৌঁছে যায় এবং গাড়িতে উঠে যাত্রা শুরু করে বাড়ির জন্য। রাস্তায় যেতে যেতে রাজিবের উৎসুক মন জিজ্ঞাসা করে : " আচ্ছা দীপ বললে না তো কি ঘটনা ঘটেছিল।"

দীপ : " ঘটনা ছিল আমার ঠাকুরদার সময়ের। তখন এখানে মোটামুটি কাঁচা ঘর ছিল দুই একটা।আমার ঠাকুরদা এই প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য প্রায়ই তার বন্ধু দের সাথে এখানে আসতো।"

দীপের গল্প 

দীপের গল্পঃ শোনার জন্য রাজীব বেশ গুটিয়ে বসলো। এখনো বাড়ি যেতে অনেক সময় ততক্ষনে সবটাই শোনা হয়ে যাবে।

দীপ বলে চলে : " দিনটা ছিল ভাদ্র মাসের পূর্ণ অমাবস্যার রাত, আলো ছাড়া বাইরে কিছু দেখার উপায় ছিল না। সেই রাতে তিন বান্ধবী তাদের বাড়ি ফিরছিল রহস্যপুর পার করে ২ কিমি দূরে তাদের বাড়ি। শহর থেকেই তাদের পিছু নিয়েছিল তিনজন বকাটে ছেলে।তাদের উদ্দেশ্য মোটেই ভালো ছিল না। অনেক দিন ধরেই তারা ওই মেয়ে তিনটে কে ফলো করছিলো । ওই তিন বান্ধবী দেখতে ছিল অপূর্ব। যখনই তারা রহস্যপুর আসে তখনই সেই ভরা অমাবস্যার দিনে ওই তিনটে ছেলে ওই তিনটে মেয়েকে ধর্ষণ করে খুন করে । পর দিন তাদের উলংগ রক্তাক্ত দেহ দেখে লোকেরা পুলিশকে খবর দেয় । পুলিশ তাদের দেহ ময়না তদন্তে পাঠায়, জায়গাটাকে সিল করে দেয়।"

রাজীব: " অপরাধীদের কোনো ভাবে ধরা যায়নি????"

দীপ: " হ্যাঁ... পরে তিনজনেই ধরা পরে ছিল। অপরাধী অপরাধ করবে কোনো ক্লু ছাড়া এটা তো হয় না। ওদের মধ্যে একজন নিজের মানি ব্যাগ ফেলে গেছিলো যার মধ্যে তার আইডেন্টি প্রুভ ছিল। পরে সেই একজন থেকে বাকি দুই জনকে ধরা সম্ভব হয়েছিল। আমার ঠাকুরদা পরে ওখানে গিয়ে সবটা জানতে পারে। পুরনো খবরের কাগজে চোখ রাখলে আজও সেই মর্মান্তিক খবর চোখে পরে ।"

রাজীব: " অপরাধীদের কি শাস্তি হয়েছিল??"

দীপ:" ওদের জেল হেফাজতে কঠোর শাস্তির পর ফাঁসি দিয়ে দেওয়া হয়েছিল।"

রাজীব: " তাহলে ওখানে যে কয়েকটা বাড়ির কথা বলেছিলে ওরা কথায় গেলো??"

দীপ: " ভূতের জ্বালায় কি আর তাদের ওখানে থাকার যো ছিল!! প্রতি অমাবস্যায় কেউ যদি ওখান দিয়ে ওই গ্রামে প্রবেশ করতো তাহলে তাদের পরদিন মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হতো। তাদের ঘাড়ে কামড়ের আর পিঠে নখের আঁচড়ের দাগ পাওয়া যেত।"

রাজীব: " তাহলে তুমি বলছো ওরা ভূতের ভয় ওখান থেকে অন্য জায়গায়। চলে গেছে?"

ড্রাইভার বলে ওঠে : " হ্যাঁ বাবু... আমারও ওখানে থাকতাম ভূতের জ্বালায় শহরে চলে আসতে হয়। "

রাজীব তো সব শুনে পুরো বিস্মিত।

দীপ : " একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করেছি রাজীব??"

রাজীব : " দীপঙ্কর বাবুর শরীরেও একইরকম দাগ পাওয়া গেছিলো। কিন্তু উনি তো এক কিমি দূরে বাড়ি বানিয়ে ছিল ।"

দীপ : " হ্যাঁ...উনি রহস্যপুরে যে জায়গায় মেয়ে তিনটে রেপ হয়ে খুন হয়েছিল ওখান থেকে মাটি এনে বাড়ি করেছিল। তাই সবাই মনে করে ওদের আত্তাগুলোই ওনার মৃত্যুর কারণ।"

অন্ধকার রাতের ভুত|অন্ধকার রাতের ভূত

রাজীবের অবিশ্বাসী মন এটা কিছুতেই মানতে চায় না যে ওখান থেকে মাটি আনার কারণে ওনার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু রাজীব যে এই কথায় বিশ্বাস হয়নি তা প্রকাশ করে না। সে চুপ করে যায়। কারণ হয়তো সে এটা ভেবে চুপ করে যায় যে, সে তো ভূতে বিশ্বাস করে না বাকিরা করে তাই কারোর বিশ্বাসে প্রশ্ন তুলতে নেই। সে যেদিন এর প্রমাণ পাবে সেদিন সবাইকে বিশ্বাস করার কথা বলতে পারবে।

এসব নিয়ে কথা বলতে বলতে কখন যে পৌঁছে গেলো শহরে বুঝতে পারলো না সে। দীপকে গাড়িতে তুলে সে যখন বাড়ি এসেছে তখন ঘড়িতে রাত ৯টা। শহরের রাস্তায় এতো ভীড় যে আস্তে দেরি হয়ে গেলো। খুবই ক্লান্ত সে আজ। রাতে শোবার সময় সে ভাবছিল অনেক দিন ধরে ক্লাবে যাওয়া হয় না। কাল ক্লাবে যেতেই হবে। অনেক দিন বন্ধুদের সাথে কথা হয় না।

পরের দিন অফিসে গেলে দীপ জিজ্ঞাসা করে :"কি রাজীব বাবু কাল কেমন লাগলো রহস্যপুর??"

রাজীব: "বেশ ভালোই"

দীপ: " তা তোমার সেই ভুতুড়ে ঘর বাড়ি পেলে??"

রাজীব: " না গো এখনও পাইনি।"☹

রাজীবের দীপের সংঘ বেশ ভালোই লাগে । তাই ভুতুড়ে ফ্ল্যাটের এক সঙ্গী বানাবে বলে জিজ্ঞেস করে বসলো " আচ্ছা দীপ তুমি কি ভূতে ভয় পাও?"

দীপ: ( মুচকি হেসে) " হ্যাঁ... তা একটু - আধটু তো পাই ।"

রাজীবের আর তাকে সঙ্গী বানানোর ইচ্ছে পূরন হলো না। পলাশ বাদে বাকি তার তিন বন্ধু ভূতে ভয় পায় না। অফিসে ছুটির পর বাড়ি গিয়ে রেস্ট করে অনেক দিন পরে সে আজ ক্লাবে গেলো।

জামাল : " আরে এটা কে এসেছে!! যার দর্শন পেলাম আজ!!?" 

সাগর: "আরে ভাই কি খবর? তা কি মনে করে??" 

(বাকি দুই বন্ধুর সেম রিয়েকশন)

রাজীব : " ওরকম কেনো করছিস তোরা?? . এই কয়দিন খুবই ব্যস্ত ছিলাম, কাজের খুবই চাপ ছিল । টা বলে সবাই আছিস কেমন?" 

অনিক : " তোর যে আমাদের কথা মনে পড়েছে তাতেই আমরা ভালো হয়ে গেলাম"

রাজীব : " হুর.... তা বল কোনো খবর আছে নাকি??"

সাগর: " না রে এখনও কোনো খবর নেই তবে আর দুই একদিনের মধ্যে খবর পেয়ে যেতে পারি।"

রাজীব : " জানিস.. একটা ভুতুড়ে প্লেস এর খবর পেয়েছি" 

পেত আত্মা  ও ভূত | পেত আত্মা 

পলাশ : " ওরে বাবা আবার ভুত".. ( বলেই সে রাম নাম জপতে জপতে সেখান থেকে চলে গিয়ে কেরাম খেলায় মনোনিবেশ করে।)

তারপরে ওরা পলাশের কণ্ড দেখে খানিক হেসে আবার টপিকে ফিরে আসে।

সাগর: " তা বল কোন ভুতুড়ে প্লেস এর কথা বলছিলি"

রাজীব : " আমার অফিস কলগি দীপ ওর সুবাদে রহস্যপুর নামে একটা জায়গায় খোঁজ পাই"

জামাল ( এতক্ষন সে মন দিয়ে ফোন ঘাটছিল এসব শুনে সে ফোন রেখে উৎসুক হয়ে ওঠে এবং বলে): "হ্যাঁ দোস্ত তারপরে তুই বলে যা খালি"

অনিক মজা করে বলে : " এতক্ষনে টনক নড়ল মহাশয়ের "

রাজীব পুরোটা বিস্তারিত ভাবে বলতে থাকে সাথে সেই দীপঙ্কর বাবুর বাংলোর কথাও বলে। বিষয়টা শুনে সবাই বেশ মজাই পায় আর ভাবতে থাকে যদি এরকম কোনো এক জায়গায় সন্ধান তারা পেয়ে যায় তো ভালো হয়। ঠিক সেই সময় রাজীবের মা ফোন করে বাজার দিয়ে আলু নিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য। তাই সেই টপিক ওখানেই শেষ করে সে বাজারে চলে যায়। সেদিনের মতো ওই টপিক ওখানেই শেষ হয়।

বাংলো বাড়ির ভূত | বাংলো বাড়ি  মানেই ভূতের বসবাস

এইভাবে বেশ কয়েকদিন কেটে গেলো কিন্তু কোনো খবর পাওয়া গেলো না। হঠাৎই একদিন অফিসে থাকা কালীন রাজীবের কাছে এক ব্যাক্তি ফোন করে বলে তার কাছে এরকম এক বাংলোর খবর আছে কিন্তু ফ্ল্যাট হবে না।( রাজীবের ফোন নম্বর নিউজ পেপারে দেওয়া হয়েছিল তাই ফোনটা তার কাছেই আসে) রাজীব খবরটা শুনে বেশ আনন্দ পেল। ভাবলো ফ্ল্যাট বা বাংলো তাতে কি আছে ভুত হলেই হবে। অফিসে কাজের মধ্যে থাকার জন্য তখনই সে কথা বলতে পারে না । সে ব্যাক্তিটিকে বলে সন্ধ্যার পড়ে যোগাযোগ করবে।

বাড়ি ফিরে সে ঠিক করে বন্ধুদের সামনে একবারে কথা বলবে তাহলে ব্যাপারটা বেশ ভালো হবে এমনিতেই বাড়িতে কেউ ব্যাপারটা পছন্দ করে না। তারপরে ক্লাবে গিয়ে সে বন্ধুদের সামনে ওই ব্যাক্তিকে ফোন করে। যে ফোন করেছে তার নাম হলো তাপস মিত্র। সে জানায় যে রহস্যপুর নামের এক জায়গা আছে সেখান থেকে ১ কিমি দূরে আছে সেই বাংলো । একথা শুনে একে ওপরের মুখের দিকে তাকায় আনন্দের সাথে। তারা মনে মনে যা চেয়েছিল তাই হলো। বাকি কিছু না শুনেই তারা বাংলো কিনতে রাজি হয়ে যায়। কিন্তু লোকটি জানায় আগেই কিন্তু হবে না আজ অবধি কেউ এখানে ভূতের জন্য টিকতে পারেনি তাই আগে কয়দিন থেকে দেখুক যদি থাকতে পরে তারপরে না হয় কিনবে। লোকটির কথা শুনে সবাই ভালো লাগলো । লোকটি ছিল ম্যানেজার দীপঙ্কর বাবুর ছেলে ওনাকে রেখে এখানে ওনাদের বাকি সম্পত্তির সাথে ঐ ভুতুড়ে বাংলো ও উনি দেখা শোনা করেন। ঠিক হলো সামনের সপ্তাহের শনিবার ওই বাংলো দেখতে যাবে সবাই। কিন্তু তাতে ম্যানেজার রাজি হয় না তিনি বৃহস্পতিবার আস্তে বলেন। তার কথা মতো সবাই ওই দিনেই যাবে বলে রাজি হয়ে গেল। 

বৃহস্পতিবার যেহেতু সপ্তাহের মাঝের দিন তাই সবাইকে অফিসে ছুটি নিয়ে তারপরে যেতে হলো। সকালে এক বড়ো গাড়ি এলো তাদের সেই বাংলোয় নিয়ে যাবার জন্য। তারা তো গাড়ি দেখেই প্রত্যেকে অবাক।

জামাল: "এরকম আশ্চর্য ঘটনা কোথাও দেখিস আগে!? যারা বাড়ি বেচবে তারা গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছে !!"

সাগর: " শহর থেকে দূরে তাছাড়া ঐদিকে কেউ যেতেও চায় বা না তাই হয়তো গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে আমাদের সুবিধার জন্য।"

সাদা বাংলো বাড়ি  | অদ্ভুত বাংলো বাড়ি 

এসব কথা বলতে বলতে , হাসি - ঠাট্টা করতে করতে কখন যে তারা পৌঁছে গেলো বুঝতে পারলো না। বন্ধুরা একসাথে থাকলে যা হয় আরকি...

গাড়ি গিয়ে থামলো ঠিক বাংলোর সামনে। তারা তো বাংলো দেখে অবাক, কি বিশাল !! পুরো সাদা রঙের দোতলা বাংলো । ভুত ছাড়াও দিনের বেলা ভয় লাগবে। সামনে আবার পুকুরও আছে। ড্রাইভার ওদের বাইরে থাকা বেঞ্চের উপর বসতে বললো, ম্যানেজার বাবুর কাছে চাবি আর উনি এখনো এসে পৌঁছায়নি।মিনিট দশ একের মধ্যে এসে পৌঁছে যাবে। একথা শুনে তারা বাংলোর চার পাশটা একটু ঘুরে দেখতে থাকলো । চারি দিকে অনেক বড়ো বড়ো গাছ। মানুষ না থাকলেও কি আছে বাড়ি খুবই পরিষ্কার। দেখে মনে হয় এখানে লোকজনের আনাগোনা আছে। বাগানে অনেক ফুলের সমাহার। রং - বেরঙের সব ফুল, চারি পাশে পাখির ডাক। পাশে আবার সুইমিং পুল। এসব দেখতে দেখতে ম্যানেজার বাবু চলে আসলেন। তারপরে তারা চলে গেল ওনার সাথে দেখা করার জন্য। 

ম্যানেজার বাবু: " নমস্কার .. আমি তাপস মিত্র। আমি সেদিন ফোন করেছিলাম"

রাজীব : " নমস্কার .. আমি রাজীব পাল। সেদিন ফোন আপনার সাথে আমার কথা হচ্ছিল।" ( রাজীব এরপরে ম্যানেজার তাপস মিত্রের সাথে তার বন্ধুদের পরিচয় করিয়ে দিল)

তাপস বাবু: " আচ্ছা... আপনাদের বাংলো কেমন লাগলো বাইরে থেকে ?? পছন্দ হলো?"

জামাল: " হ্যাঁ.. পছন্দ হবে না কি বলছেন!! এতো সুন্দর বাংলো.. just ফাটাফাটি।"

তাপস বাবু: " আচ্ছা এবার তাহলে চলুন ভিতরটা ঘুরে দেখুন .. ভিতরটা আরো বেশি সুন্দর" 

অনিক: " আচ্ছা চলুন যাওয়া যাক "

রাজপ্রাসাদ | বাংলো বাড়ি 

তাপস বাবু দরজার দিকে এগোলেন এবং তালাটা খুললেন। সেকি বিশাল দরজা যেন কোনো রাজপ্রাসাদের দরজা। দরজা খুলে তাপস বাবু বাড়ির সব লাইটগুলো জ্বালিয়ে দিলেন। কি দারুন বসার ঘর যেনো রাজ সভা.. কত বড় হল রুম তাতে আছে বিশাল সোফা , সামনে টেবিল, দামি দামি ফ্লাওয়ার ভাস, টিভি, আর উপরে দিকে তাকাতেই দেখা যায় এক বিশাল ঝাড়বাতি। সোফার দুই ধার দিয়ে সবুজ কার্পেটে মোড়া সিড়ি উপরে উঠে যায়। বসার ঘর ছাড়াও নিচে আছে একটা বাথরুম,রান্নাঘর, আর একটা ডাইনিং রুম এবং ঠাকুর ঘর আছে তবে ঠাকুর নেই,ঠাকুর আনার আগেই তো বিরাট কাণ্ড ঘটে গেছিলো তাই আর পরে ঠাকুর আনেনি। তাপস বাবু তাদের এবার ওই সবুজ পথে উপরে নিয়ে গেলেন উপরটা ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য। উপরে আছে পাঁচটা রুম , একটা বসার বসার ঘর সেখানেও একটা ঝাড়বাতি আছে তবে সেটা নিজের থেকে আকারে ছোটো , আর আছে বাথরুম আর রান্নাঘর এবং ডাইনিং রুম। তাপস বাবু সবটা ঘুরিয়ে দেখলেন। ঘরগুলোতে আছে সব দামি দামি সুদৃশ্য প্রসাধনী, অনেক বিখ্যাত চিত্রশিল্পীর বহুমূল্য চিত্র যার দাম বাজারে কয়েক লাখ। ঘর গুলো বিশাল বড়ো .. এতো বড়ো ঘর দেখে রাজীব ভাবতে থাকে এখনকার একটা ঘর তাদের দুটো ঘরের সমান। ঘরগুলো সব একই মাপের হলেও ঘরগুলো একই ভঙ্গিতে সাজানো না। সব ঘড়ি বিচিত্র ভঙ্গিতে সাজানো। সব ঘর দেখা শেষ করে তারা ছাদে যায়। ছাদে আছে একটা স্টোর রুম। সেখানে অনেক জিনিস পত্র আছে বিশেষ করে সব আয়না কিন্তু যার অধিকাংশই ভাঙা।

আয়না ভূত

রাজীবের জিজ্ঞাসু মনের এই কারণটা জানতে ইচ্ছা হয় এবং সে জিজ্ঞাসা করে বসে : " আচ্ছা তাপস বাবু এই বাড়িটা তো একদিন ব্যবহার হয়েছে তাহলে এতো আয়না একদিন ভাঙলো কিভাবে?"

তাপস বাবু: " এই একই প্রশ্ন সবারই যার উত্তর নেই। অনেকে বলে ভূতে নাকি ভেঙেছে।"

রাজীবের মন এই যুক্তি মানতে চায় না কারণ সে তো ভূতে বিশ্বাসী নয়। সে ভাবতে থাকে হয়তো কেউ ইচ্ছে করেই এসব করেছে। এসব ভাবনায় যখন রাজীব বিভোর ঠিক তখনই অনিক চিৎকার করে ওঠে। সবাই তাকিয়ে দেখে অসাবধানতা বসত অনিকের পায়ে কাঁচ ফুটে গেছে এবং দেখা দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে। সাগর সঙ্গে সঙ্গে তার পা থেকে কাঁচের টুকরোটা বার করে দিল আর সঙ্গে সঙ্গে নদীর জল প্রবাহের মতো রক্ত খরণ হতে লাগলো। একটু কাঁচ ফুটে অতো রক্ত বেরোনোর ঘটনা তারা আগে কখনো দেখেনি। রাজীব সঙ্গে সঙ্গে তার পকেট থেকে রুমাল বের করে অনিকের ক্ষতস্থান ভালো করে বেঁধে দিল এবং বললো যে শহরে গিয়ে যেন সে একবার ডাক্তার দেখিয়ে নিতে নাহলে ইনফেকশান হয়ে যেতে পারে। এই ঘটনার পর তারা ওখান থেকে বেরিয়ে ছাদটা ঘুরে দেখে । কি সুন্দর হওয়া ছাদে প্রাণটা একেবারে জুড়িয়ে যায় । ছাদ থেকে চার পাশের ভিউটা খুব সুন্দর আসছিল। এখন তো আবার ফোনের যুগ তাই জামাল ফোন বের করে নিজেদের এবং বাড়ির , প্রকৃতির বেশ কিছু ফটো ক্লিক করে নিল। 

এবার বাড়ির ভিতর ঘুরিয়ে দেখানোর পালা মিটলে তারা নিচে আসে । তাপস বাবু বলেন: " এবার বলুন বাড়ি আপনাদের কেমন লাগলো?"

জামাল : " বাড়ি তো খুবই পছন্দ হলো ভিতরটা ঘুরে।"

তাপস বাবু: " খুব ভালো।.. তাহলে ভিতরে কি আর কিছু দেখার আছে? "

সাগর : "না সবই তো দেখেই নিলাম ভিতরে আর কিছু দেখার নেই.. কি বলিস তোরা ?"

সবাই সাগরের কথার সাথে সহমত পোষণ করল। একথা শুনে তাপস বাবু দরজা বন্ধ করার আগে সবাইকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে ভিতরে কারোর কোনো কিছু থেকে যায়নি তো .. সবাই ভালো করে নিজেদের জিনিস চেক করে নিল । তারা কিছু ফেলে আসেনি । 

মধ্যে রাত | মধ্যে রাতের ভূতের দেখা

ঘড়িতে তখন সময় ৩ টে বেজে ১০ মিনিট.. ইতিমধ্যেই তাদের পুরো বাংলো ঘোড়া হয়ে গেছিলো..

তাপস বাবু জিজ্ঞাসা করেন:" তারপরে বলুন আপনাদের বাড়ি কেমন লাগলো?"

রাজিব জানালো: " বাড়ি আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে.. এবার বলুন কত দামে বিক্রি করতে চান?"

তাপস বাবু( একবার ঘড়ির দিকে সময়টা দেখে নিয়ে বললেন): "আজ বরং টাকা পয়সার ব্যাপারটা থাক সময় নেই এখন... আমরা বরং পরে যোগাযোগ করে নেব" ..

এরপর তাপস বাবু বাংলো বন্ধ করে করেন... এরপর তাপস বাবু পকেট থেকে তার কার্ডটা বার করে রাজীবের হাতে দিয়ে বলেন আসি.. আপনারা আর এখানে বেশিক্ষণ থাকবে না যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়ি ফিরে যান। কথাটা শেষ করা মাত্রই অনেক ব্যাস্ততার সাথে তিনি ওই চলে যান। তার আচরণে সবাই অবাক হয়ে গেলো... তারপরে তারা বাড়ি যাবার উদ্দেশে গাড়ির দিকে রওনা হলো... 

তেঁতুল গাছের ভূত 

তারা যাবার পরপরই এক দমকা হাওয়ায় বাড়ির সামনের তেতুল গাছের থেকে ছাড়তে তেতুল নিচে পরে গেল....

তারা গাড়িতে গিয়ে উঠলো এবং গাড়ি শহরের দিকে রওনা করলো... গাড়ি যত এগোচ্ছে অন্ধকার তত ঘন হয়ে বিকেল রাতে পরিণত হচ্ছে। সারাদিনের ক্লান্তির পর তারা গাড়ির মধ্যে যে কখন নিজেদের অবচেতনে ঘুমিয়ে পড়ল বুঝতেই পারলো না... তারপরে গাড়ির হর্নের তীব্র আওয়াজে তাদের ঘুম ভাঙলো .. চোখ খুলতেই দেখলো তারা শহরে এসে গেছে।

এরপরে তারা গাড়ি থেকে নেমে good bye বলে যে যার বাড়ির উদেশে রওনা হলো।

রাজিব বাড়ি ফেরা মাত্রই তার মা এক সস্তির নিশ্বাস ফেললোএবং বললো:"যা হাত মুখ ধুয়ে আয় আমি খেতে দিচ্ছি"

রাজিব তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসলো.. তার ক্লান্ত শরীর দেখে তার মা ওই বাংলোর ব্যাপারে আর কিছু জানতে চাইলো না.. রাজিব বলের ইচ্ছা প্রকাশ করলো না। সে তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়লো। পরের দিন সকালে সে তার মাকে জানালো যে তার ওই বাংলো খুবই পছন্দ হয়েছে। সে আর দেরি করবে না যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কিনে ফেলতে চায়।রাজীবের বাবা মায়ের প্রথম থেকেই আপত্তি ছেলের কথার উপর কথা বলতে চাইল না অশান্তির ভয়ে। তারা জানায় রাজিব যেনো ভেবে চিন্তে কাজ করে। তাদের বসয় হচ্ছে শেষ জীবনে সহায় সম্বল বলতে তাদের একমাত্র আদরের ছেলে রাজিব। এসব কথার পর রাজিব কিছু না বলেই অফিস এ চলে যায়... ইদানিং অফিসে কাজের খুব চাপ। কাজের চাপে কবে যে একমাস চলে গেলো সে বুঝতেই পারলো না।

এর মধ্যে অনিক বিদেশে একটা মোটা অঙ্কের চাকরি পেয়েছে তাই সে দুবাইয়ে চলে যায় ফলে তার আর যাওয়া হয় না।

এবারে সে ঠিক করলো আর দেরি করা যাবে না যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়িটা কিনে দেলা দরকার। সেদিন অফিসে থেকে ফিরে এসে সে তাদের বন্ধুদের সাথে দেখা করার জন্য ক্লাব এ যায়। সেখানে তারা আলোচনা করে যে এবার যোগাযোগ করে বাংলোটা কিনে ফেলা দরকার।এই বলতে না বলতেই তাপস বাবু ফোন করেন। রাজিব ফোনটা রিসিভ করে।

বাংলো বাড়ি কেনার স্বপ্ন 

তাপস বাবু:" নমস্কার । রাজিব বাবু বলেছেন?"

রাজিব: " হ্যাঁ তাপস বাবু বলুন"

তাপস বাবু: " কেমন আছেন আপনি? তারপরে তো আর কিছু জানালেন না পছন্দ হলো কিনা বা কিনবেন কিনা তাই ভাবলাম আমিই ফোন করে জিজ্ঞাসা করি..."

রাজিব: " ভালো আছি...এই মাসের কাজের এত চাপ ছিল যে সময় করে উঠতে পারিনি.. আজই ভাবছিলাম ফোন করবো। কি আশ্চর্য দেখুন আপনিই ফোন করলেন"

তাপস বাবু : " তাহলে বলুন কবে কিনছেন আপনারা?"

রাজিব : " আমাদের তো পছন্দই তাই ভাবছি দেরি করবো না। কালি বরং কিনে ফেলবো"

তাপস বাবু:" বেশ বেশ... তাহলে কাল বিকেলে ড্রিম ক্যাফেতে দেখা করে ওখানেই কথা বার্তা হোক "

রাজিব: " আচ্ছা ঠিক আছে... সন্ধ্যে৬:০০ টায় ওখানে দেখা করছি"

তাপস বাবু: " ঠিক আছে.. রাখি তাহলে।"

তাপস বাবু ফোনটা রেখে দিলেন। তারপরে রাজিব তার বন্ধুদের কাছে গিয়ে বলে "কথা ফাইনাল হয়ে গেলো কাল সন্ধ্যে ৬ টায় ড্রিম ক্যাফেতে দেখা করবে বলেছেন তোদের অসুবিধা নেই তো??"তার বন্ধুরা সহমত পোষণ করল। 

সাগর: " সব তো ঠিকই হলো। তাহলে এবার একটু আড্ডা মারা যাক। অনেকদিন আগের মত আড্ডা দেওয়া হয় না।"

রাজিব: " কথাটা ঠিকই বলেছিস.. তোরা কথা বল আমি বরং একটু খাবার নিয়ে আসি তাহলে আড্ডাটা জমে যাবে"

জামাল: " ওহঃ রাজিব কুমার ট্রিট দিচ্ছ নাকি তুমি নতুন বাংলো কেনার আনন্দে!??"

রাজিব: " হ্যাঁ মানে ওই আরকি.. কথাটা ফাইনাল হয়ে গেলো তাই ভাবলাম একটু celebration হয়ে যাক। বাবলু দার দোকান দিয়ে গরম গরম চপ সিঙ্গারা নিয়ে আসি"

আজ এ পযন্তই দেখা হবে আবার অন্য কোনো একদিন। 

নিয়ে আসবো আরো নতুন নতুন গল্প। 


নোটবুক : আশাকরি আপনি আমাদের ওয়েবসাইটে এসে কাঙ্খিত তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। 

এরকম আরো অসংখ্য হাদিস ও শিক্ষামূলক পোস্ট সহ আরো বিভিন্ন ধরনের পোস্ট পেতে আমাদের এই বাংলা ব্লক ওয়েবসাইট এর সাথেই থাকুন । 

প্রয়োজনীয় সকল তথ্য পেতে ভিজিট করুন জে কে ব্লগ বিডি ডট কম ওয়েবসাইটডে ও যোগাযোগ করুন জিমেইল ,টেলিগ্রাম, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও জে কে ব্লক বিডি ডট কম ওয়েবসাইটে। 

আমাদের এই জে কে বাংলা ব্লগ বিডি ওয়েবসাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। 



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
ajkerit